Wednesday, 19 November 2025

গীতা পরিচয়: ভগবানের গান ও জীবনের সার

শ্রীমদ্ভাগবদগীতা: এক শাশ্বত জীবনের নির্দেশিকা

শ্রীমদ্ভাগবদগীতা: ভগবানের গান

জীবনের এক শাশ্বত নির্দেশিকা

🔥
🙏

'ভগবদ' মানে ঈশ্বরের এবং 'গীতা' মানে গান। আক্ষরিক অর্থে শ্রীমদ্ভাগবদগীতা হলো "ভগবানের গাওয়া গান"

এটি কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং এটি মানুষের জীবনের চরম সত্যকে জানার এক অনন্য মাধ্যম। স্বামী মুকুন্দানন্দের ব্যাখ্যার আলোকে আজ আমরা জানব গীতার প্রকৃত পরিচয় ও এর গভীরতা সম্পর্কে।


সত্য জানার দুটি পথ: আরোহ বনাম অবরোহ

আমরা কীভাবে জ্ঞান অর্জন করি? বেদে জ্ঞান অর্জনের দুটি প্রধান পথের কথা বলা হয়েছে:

১. আরোহ পন্থা (Ascending Process)

এটি হলো নিজের ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধির মাধ্যমে সত্যকে খোঁজার চেষ্টা। বিজ্ঞান এভাবেই কাজ করে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধি অপূর্ণ। তাই আজ যা বৈজ্ঞানিক সত্য বলে মানা হয়, ১০০ বছর পর তা ভুল প্রমাণিত হতে পারে (যেমন ডাল্টনের পরমাণুবাদের পর রাদারফোর্ড বা কোয়ান্টাম তত্ত্ব এসেছে)। এই পথে পরম সত্যকে জানা অসম্ভব।

২. অবরোহ পন্থা (Descending Process)

এটি হলো কোনো নিখুঁত উৎসের কাছ থেকে জ্ঞান গ্রহণ করা। যেমন, নিজের বাবাকে চেনার জন্য আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি না, মায়ের কথায় বিশ্বাস করি। তেমনই, আধ্যাত্মিক সত্য জানার জন্য বেদ বা গুরুর বাণীই হলো প্রমাণ। গীতা এই অবরোহ পন্থার জ্ঞান, যা স্বয়ং ভগবানের মুখনিসৃত।


গীতা কেন বিশেষ?

প্রস্থানত্রয়ী ও ব্রহ্মবিদ্যা

বৈদিক শাস্ত্রে তিনটি প্রধান স্তম্ভ বা 'প্রস্থানত্রয়ী' আছে: উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র এবং ভগবদ্গীতা। এর মধ্যে উপনিষদ ও ব্রহ্মসূত্র সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা বেশ কঠিন। কিন্তু গীতা হলো এদের সারসংক্ষেপ এবং সহজবোধ্য।

গীতার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য:

  • ব্রহ্মবিদ্যা (Brahma Vidya): এটি আমাদের পরম সত্য বা ঈশ্বরকে জানার বিজ্ঞান শেখায়।
  • যোগশাস্ত্র (Yoga Shastra): কেবল তত্ত্ব নয়, সেই জ্ঞানকে কীভাবে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে হয়, গীতা সেই কৌশল বা 'যোগ' শেখায়।

গীতাকে 'গীতোপনিষদ'-ও বলা হয় কারণ এটি সমস্ত উপনিষদের সার নির্যাস।


গীতার পটভূমি: কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গন

গীতার জ্ঞান কোনো শান্ত আশ্রমে বা হিমালয়ের গুহায় বসে দেওয়া হয়নি। এটি দেওয়া হয়েছিল একটি ভয়ানক যুদ্ধের ঠিক আগে, কুরুক্ষেত্রের ময়দানে। কিন্তু কেন?

"চরম সংকটই গভীরতম জ্ঞানের জন্ম দেয়।"

মহাভারতের ভীষ্ম পর্বে সন্নিবেশিত এই গীতা শুরু হয় অর্জুনের বিষাদ দিয়ে। কৌরবদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে পাণ্ডবদের এই যুদ্ধ ছিল অনিবার্য। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের আত্মীয়-স্বজন, গুরুজনদের দেখে অর্জুন মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি যুদ্ধ করতে অস্বীকার করেন।

অর্জুনের এই মানসিক দ্বন্দ্বে বা 'বিষাদ'-এর মুহূর্তেই শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য, কর্মের দর্শন এবং ভক্তির পথ দেখান। অর্জুন এখানে কেবল একজন যোদ্ধা নন, তিনি বিভ্রান্ত মানবাত্মার প্রতীক, যিনি ভগবানের শরণাগত হয়ে সঠিক পথের সন্ধান পাচ্ছেন।

মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে আলবার্ট আইনস্টাইন—বিশ্বের মহান মনীষীরা যুগে যুগে গীতার এই শাশ্বত বাণীতে জীবনের দিশা খুঁজে পেয়েছেন।

গীতার আলোয় পথচলা

স্বামী মুকুন্দানন্দের ভগবদ্গীতার ভূমিকা অবলম্বনে রচিত।

No comments:

Post a Comment