Thursday, 11 December 2025

গীতা ১.১৩: কৌরবদের গর্জন ও যুদ্ধের কোলাহল

গীতা ১.১৩: কৌরবদের গর্জন ও যুদ্ধের কোলাহল

কৌরবদের গর্জন ও যুদ্ধের কোলাহল

গীতার প্রথম অধ্যায়, ত্রয়োদশ শ্লোক

🥁
🔊

পিতামহ ভীষ্ম তাঁর শঙ্খ বাজিয়ে যুদ্ধের সূচনা ঘোষণা করতেই যেন কুরুক্ষেত্রের আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠল। সেনাপতির ইশারা পাওয়ামাত্রই কৌরব পক্ষের বিশাল সেনাবাহিনী কী প্রতিক্রিয়া দেখাল?

এই শ্লোকটি আমাদের সেই মুহূর্তের শব্দ, উত্তেজনা এবং যুদ্ধের ভয়াবহ পরিবেশের এক জীবন্ত বর্ণনা দেয়।


গীতার বানী: শ্লোক ও সরল অর্থ

"ততঃ শঙ্খাশ্চ ভের্যশ্চ পণবানকগোমুখাঃ ।
সহসৈবাভ্যহন্যন্ত স শব্দস্তুমুলোঽভবৎ ।।"

(শ্রীমদ্ভাগবদগীতা ১/১৩)

সরল বাংলা ভাবার্থ: তারপর তৎক্ষণাৎ শঙ্খ, ভেরী, পণব (মাদল জাতীয় বাদ্য), আনক (ঢোল) এবং গোমুখ (শিঙা) প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রসমূহ হঠাৎ একসঙ্গে বেজে উঠল এবং সেই শব্দ তুমুল (ভয়ংকর) আকার ধারণ করল।


গভীর বিশ্লেষণ: শব্দের শক্তি

এই শ্লোকের শব্দ চয়ন এবং পরিস্থিতির বর্ণনা থেকে আমরা কৌরব সেনাবাহিনীর মানসিকতা সম্পর্কে তিনটি বিষয় জানতে পারি:

১. সহসৈব (তৎক্ষণাৎ)

সৈন্যরা ভীষ্মের শঙ্খধ্বনি শোনার সাথে সাথেই প্রতিক্রিয়া জানাল। কোনো দেরি হলো না। এর থেকে বোঝা যায় কৌরব সেনাবাহিনী কতটা সুশৃঙ্খল এবং যুদ্ধের জন্য কতটা উদগ্রীব ছিল। তারা যেন এই মুহূর্তটির জন্যই অপেক্ষা করছিল।

২. তুমুল শব্দ (কোলাহল)

বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র (শঙ্খ, ঢোল, শিঙা) একসঙ্গে বেজে ওঠায় যে শব্দ তৈরি হলো, তা সুমধুর বাদ্য নয়, বরং এক ভয়ংকর কোলাহল। এর উদ্দেশ্য ছিল শত্রুপক্ষের মনে ভয়ের সঞ্চার করা এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করা।

৩. আবেগের বহিঃপ্রকাশ

এই তুমুল শব্দ কৌরব পক্ষের প্রবল উৎসাহ এবং আক্রমণাত্মক মনোভাবের পরিচয় দেয়। তারা যুদ্ধ জয়ে এতটাই নিশ্চিত ছিল যে, তাদের উল্লাস যুদ্ধের আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।


আমাদের জীবনে এই শিক্ষার প্রয়োগ

কৌরবদের এই কোলাহল আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়।

শব্দ বনাম সারবস্তু:
কৌরবদের গর্জন ছিল আকাশচুম্বী, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছিল পাণ্ডবদের, যারা শুরুতে শান্ত ছিলেন। জীবনে যারা বেশি আওয়াজ করে বা আস্ফালন করে, তারাই সবসময় বিজয়ী হয় না। অনেক সময় নীরব প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাস কোলাহলের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়।

প্রবাদ আছে— "খালি কলসি বাজে বেশি।" কৌরবদের এই 'তুমুল' শব্দ কি তাদের অন্তঃসারশূন্যতারই প্রতীক ছিল?

গীতার আলোয় পথচলা

শ্রীমদ্ভাগবদগীতার ১/১৩ শ্লোকের উপর ভিত্তি করে একটি উপস্থাপনা।

No comments:

Post a Comment